ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

সোর্স পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইয়াবা ডন শামশু!

Samso-Pic-590x540-590x540কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
র‌্যাবের সোর্স পরিচয়ে জেলায় আতংক ছড়াচ্ছে একাধিক মামলার আসামী শামশুল আলম নামের এক শীর্ষ ইয়াবা ও মানবপাচারকারি। আইন শৃংখলা বাহিনীর অগোচরে সাগরপথে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে বাংলাদেশে। প্রতিনিয়ত তার নিজস্ব ফিশিং ট্রলারে করে এসব ইয়াবার চালান দেশে নিয়ে আসলেও সে রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাইছড়ি গ্রামের দিন মজুর  ইসলাম মিয়ার ছেলে শামশুল আলম সোহাগ। এক সময়ে পবিবারে নুন আনতে পান্থা ফুরিয়ে যায় অবস্থা। অভাব অনটনের সংসারে লেখাপড়ায় বেশী দূর যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু, ২০১০-১২সালে তার বাড়ির পার্শ্বে ঘাট দিয়ে অহরহ লোকজন ট্রলারে করে মালয়েশিয়া যাচ্ছে দেখে এ কাজে তারও লোভ পড়ে। জেলার আরেক শীর্ষ মানবপাচারকারি উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ছেপটখালী গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান সিকদারের ছেলে আরেক শীর্ষ গডফাদার ফয়েজ আহমদ ও শরীফ আহমদের ছেলে আবুল কালাম হাত ধরে জড়িয়ে পড়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারে। আর এই কাজে সফলতা পেতে বেশী দিন দেরি হয়নি শামশুর। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামায় করতে থাকে দিনের পর দিন। অল্প দিনেই কোটিপতির খাতায় নাম উঠায় এই মানবপাচারকারি। ওই অবৈধ কাজে লাভজনক অবস্থা দেখে কয়েক মাসের ভিতর মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের নিজস্ব নৌযানে পৌছে দিতে নির্মাণ করে নেয় দুইটি ট্রলার। তার ছত্রছায়ায় গড়ে উঠে এক সময়ের দেশের আলোচিত মানবপাচারের রাণী রেবি ম্যাডাম সহ আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট।
পরবর্তীতে মানবপাচার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা ব্যবসায়। কক্সবাজার শহরের কলেজ গেইট এলাকার রফিকুল ইসলাম বাহাদুর নামের আরেক ইয়াবা ব্যবসায়ীর সাথে হাত করে পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা। একই সাথে নিজেকে র‌্যাবের সোর্স পরিচয় দিয়ে একের পর এক ইয়াবার চালান আসছে তার হাত বদল হয়ে। গত বছরের ১৮ এপ্রিল ইয়াবার চালান নিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার হাতে আটক হন তিনি। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোর সকালে কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে নিহত ব্যবসায়ী মোস্তাকের হত্যাকারি হিসাবে চিহ্নিত করেছে তার পরিবার। এ কারণে মোস্তাক হত্যা মামলার ৩নং আসামী করা হয়েছে তাকে।
সংশ্লিষ্ট এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শামশুল আলম সোহাগের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে কক্সবাজারের উখিয়ায় থানায় ৪টি, রামু থানায় ২টি, টেকনাফ থানায় ২টি ও চকরিয়া থানায় ১টি মামলা, চট্টগ্রামে ২টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগ চার্জসীট থেকে তার নাম বাদ পড়েছে অদৃশ্য কারনে। এরপরও কক্সবাজার জেলায় ৪টি মানবপাচার মামলা ও চট্টগ্রামে ১টি করে ইয়াবা ও মানবপাচার আইনে মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়াও কলাতলীর মোস্তাককে হত্যার অপরাধে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরো একটি মামলা রুজু হয় তার বিরুদ্ধে। তার নিজ গ্রাম উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে উখিয়া উপজেলা বিএনপি’র মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক হলেও তার ডানে-বায়ে কাজ করে স্থানীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা। মুলত: তাদের পিঠে ভর করেই এ গডফাদার আজ বিত্তবৈত্তের মালিক শামশু।
অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগে কর্মরত ও তার নিজ এলাকার বড় ভাই জনৈক সানাউল্লাহ তার এসব অপকর্ম ঢাকা দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন। এই সংক্রান্ত কোন থানায় শাশুর বিরুদ্ধে মামলা হলেই সানাউল্লাহর শুরু হয় দৌড় ঝাপ। একের পর এক তদবীর করে এসব মামলা থেকে শামশুকে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করে  সানাউল্লাহ। মুলত: সানাউল্লাহর কারণে অসংখ্য মানবপাচার ও ইয়াবা মামলা থেকে বাদ পড়ে যায় শামশু। বর্তমানে তার ছত্রছায়ায় কক্সবাজার জেলায় ইয়াবার বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন এবং ইয়াবার কোটি কোটি টাকার হাত বদল হয় তার সানাউল্লাহর হাত দিয়েই।
এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার র‌্যাব-৭এর কোম্পানি কমান্ডার আশেকুর রহমান বলেন, শামশুল আলম সোহাগ নামে র‌্যাবের কোন সোর্স নেই। যদি এই রকম অপরাধি বা অন্য কেউ র‌্যাবে সোর্স পরিচয় দেয়, তাহলে তাকে র‌্যাবের কাছে সোপর্দ করার অনুরোধ করেন।

পাঠকের মতামত: